স্বাস্থ্য

কি খেলে পিরিয়ডের ব্যথা কমে

পিরিয়ড বা মাসিকের সময়ে অনেক নারী ব্যথা, অস্বস্তি, এবং বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা অনুভব করেন। এই ব্যথাকে চিকিৎসা শাস্ত্রে “ডিসমেনোরিয়া” বলা হয়, এবং এটি কখনো কখনো দৈনন্দিন জীবনকে বিঘ্নিত করে তুলতে পারে। পিরিয়ডের সময় ব্যথা হালকা থেকে শুরু করে তীব্র পর্যায়ের হতে পারে, এবং এই সময়ে খাবার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চললে পিরিয়ডের সময় ব্যথা কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব। এই ব্লগপোস্টে আমরা আলোচনা করব, পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে সহায়ক কিছু খাবার এবং তাদের কার্যকারিতা নিয়ে।

পিরিয়ডের সময় ব্যথার কারণ

মাসিকের সময় ব্যথা সাধারণত জরায়ুর সংকোচনের (uterine contractions) কারণে হয়। যখন পিরিয়ড হয়, জরায়ু থেকে প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন নামক রাসায়নিক নিঃসৃত হয়, যা জরায়ুর পেশী সংকুচিত করে এবং এটাই ব্যথার কারণ। যারা উচ্চ প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন উৎপাদন করেন, তাদের ক্ষেত্রে ব্যথা বেশি হতে পারে। এছাড়াও, হরমোনের পরিবর্তন, মানসিক চাপ, এবং শরীরের পানিশূন্যতা পিরিয়ডের সময় ব্যথা বাড়িয়ে তুলতে পারে।

পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে সহায়ক খাবার

সঠিক খাবার গ্রহণ করলে শরীরের প্রদাহ এবং হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব, যা পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে। এখানে কিছু খাবার এবং পানীয়ের তালিকা দেওয়া হলো, যা পিরিয়ডের সময় ব্যথা কমাতে সহায়ক হতে পারে:

১. আদা

আদা প্রাকৃতিক একটি প্রদাহনাশক উপাদান, যা পিরিয়ডের সময় ব্যথা কমাতে অত্যন্ত কার্যকর। এটি প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিনের মাত্রা কমিয়ে দেয়, যা জরায়ুর পেশী সংকোচনকে কমিয়ে ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করে। আপনি প্রতিদিন দুই থেকে তিন কাপ আদা চা পান করতে পারেন। এছাড়া, খাবারের সঙ্গে আদা ব্যবহার করে আপনি এর উপকারিতা পেতে পারেন।

২. পাতা শাকসবজি

পালং শাক, ক্যাল শাক এবং অন্যান্য সবুজ শাকসবজি আয়রন এবং ক্যালসিয়ামের সমৃদ্ধ উৎস। পিরিয়ডের সময় শরীর আয়রন হারায়, যা দুর্বলতা এবং ক্লান্তি সৃষ্টি করে। শাকসবজি আয়রনের অভাব পূরণ করে এবং শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া, ক্যালসিয়াম পেশী সংকোচন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, যা পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে সহায়ক। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় সবুজ শাকসবজি যোগ করুন। স্যালাড, স্মুদি, অথবা রান্না করা শাকসবজি খেতে পারেন।

৩. মাছ

মাছের মধ্যে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড প্রদাহনাশক গুণসম্পন্ন। গবেষণা অনুযায়ী, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিনের মাত্রা কমায়, যা পিরিয়ডের ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে স্যামন, সারডিন, এবং ম্যাকারেল মাছ পিরিয়ডের সময় খাওয়া অত্যন্ত উপকারী। আপনি সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ মাছ খেতে পারেন। স্যামন বা সারডিন গ্রিল করে খেলে এর স্বাদ ও উপকারিতা উপভোগ করতে পারবেন।

৪. বাদাম এবং বীজ

বাদাম ও বীজের মধ্যে থাকা ম্যাগনেসিয়াম পেশী সংকোচন নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত কার্যকর। পিরিয়ডের সময় জরায়ুর পেশী সংকোচন বেড়ে গেলে ব্যথা শুরু হয়, এবং ম্যাগনেসিয়াম সেই সংকোচন কমিয়ে ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করে। এছাড়াও বাদাম এবং বীজে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট থাকে, যা প্রদাহ কমাতে সহায়ক। আমন্ড, আখরোট, ফ্ল্যাক্সসিড, চিয়া সিড ইত্যাদি প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করুন। আপনি এগুলো স্ন্যাক্স হিসেবে খেতে পারেন বা সালাদ ও স্মুদি-এর সঙ্গে মিশিয়ে নিতে পারেন।

৫. পানি এবং হাইড্রেশন

পিরিয়ডের সময় শরীরের হাইড্রেটেড থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পানির অভাব পেশীগুলিকে কঠোর করে তোলে এবং পিরিয়ডের ব্যথা বাড়িয়ে তোলে। পর্যাপ্ত পানি পান করলে পেশী সংকোচন নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং শরীরের সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঠিকভাবে কাজ করতে সক্ষম হয়। প্রতিদিন কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। এছাড়াও, পানি সমৃদ্ধ ফল যেমন শসা, তরমুজ ইত্যাদি খেলে শরীরের হাইড্রেশন বজায় থাকে।

৬. হলুদ

হলুদে থাকা কারকিউমিন প্রাকৃতিক প্রদাহনাশক। এটি প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে এবং পিরিয়ডের সময় ব্যথা কমাতে সহায়ক হতে পারে। আপনি দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় হলুদ যোগ করতে পারেন। হলুদ চা, হলুদ দুধ বা খাবারে মসলা হিসেবে হলুদ ব্যবহার করে উপকার পেতে পারেন।

৭. ডার্ক চকলেট

ডার্ক চকলেট ম্যাগনেসিয়ামের একটি চমৎকার উৎস, যা পেশী সংকোচন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এছাড়া, ডার্ক চকলেট মুড ভালো করতে এবং মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক। পিরিয়ডের সময় অনেক নারী মুড সুইং-এর শিকার হন, যা মানসিকভাবে অস্বস্তিকর হতে পারে। ডার্ক চকলেট সেই সমস্যার সমাধানে সহায়ক হতে পারে। দিনে ১-২ টুকরা ডার্ক চকলেট খেতে পারেন। তবে চকলেটের মধ্যে চিনি কম থাকা উচিত, যাতে এটি স্বাস্থ্যকর থাকে।

৮. কলা

কলায় থাকা পটাশিয়াম পেশী সংকোচন নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত কার্যকর। পিরিয়ডের সময় যাদের পেটে বা পিঠে ব্যথা হয়, তাদের জন্য কলা খাওয়া উপকারী হতে পারে। পটাশিয়াম পেশীর শিথিলতা বাড়ায়, যা ব্যথা কমায়। আপনি প্রতিদিন ১-২টি কলা খেতে পারেন। কলা স্মুদি বা সালাদে মিশিয়েও খেতে পারেন।

পিরিয়ডের সময় কিছু খাবার এড়িয়ে চলা উচিত, যা ব্যথা বাড়িয়ে তুলতে পারে:

১. কফি এবং ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়
ক্যাফেইন রক্তনালী সংকুচিত করে, যা জরায়ুর পেশী সংকোচন বাড়িয়ে দেয় এবং ব্যথা বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাই পিরিয়ডের সময় কফি, চা এবং ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলা ভালো।

২. লবণাক্ত খাবার
অতিরিক্ত লবণ শরীরে পানি ধরে রাখে, যা ফোলাভাব এবং অস্বস্তি বাড়িয়ে দেয়। তাই চিপস, প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং লবণাক্ত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।

৩. চিনি
অতিরিক্ত চিনি শরীরে প্রদাহ বাড়িয়ে দেয় এবং এটি হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণ হতে পারে। তাই মিষ্টিজাতীয় খাবার বা প্রক্রিয়াজাত চিনি এড়িয়ে চলা উচিত।

পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে সঠিক খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করা একটি কার্যকর পদ্ধতি। আদা, শাকসবজি, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার, পানি, বাদাম, এবং হলুদের মতো প্রাকৃতিক উপাদানগুলি প্রদাহ কমিয়ে এবং পেশী সংকোচন নিয়ন্ত্রণ করে ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

Rafiqul Islam

আমি মোঃ রফিকুল ইসলাম। infosearch24.com ওয়েবসাইটে আমি ২০২০ সাল থেকে শিক্ষা, ভ্রমণ এবং তথ্যপ্রযুক্তিসহ বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক সময় উপযোগী বিভিন্ন তথ্য সর্বপ্রথম তুলে ধরি । আশাকরি আমার আর্টিকেল গুলো আপনারা সকলেই নিয়মিত উপভোগ করছেন।

Related Articles

Back to top button